“যা কিছু ভাল কল্পনা করা যায়, ওনাম সেই বাণী বহন করে আনে। তার কারণ, ওনামে আমরা জাগতিক সমৃদ্ধি, ধর্মবোধ এবং করুণার প্রকাশ দেখতে পাই। এই উত্সবের পরিবেশ উত্সাহ, খেলা এবং নাচে পরিপূর্ণ থাকে। এই উত্সব আমাদের পূর্বপুরুষগণের সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ সূচিত করে। এই উত্সবে এমন প্রেমের জোয়ার বয় যা পরিবারের সব সভ্যদের দূর দূর থেকে একত্রে নিয়ে আসে। তার চেয়েও বড় কথা, এই উত্সব জীবনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তত্ত্ব আমাদের কাছে প্রকাশ করে। এই উত্সব এক সম্রাটের কাহিনীর উপর স্থাপিত যিনি নিজের জীবনে এইসব আদর্শ পালন করে গেছেন।

“ওনাম দুরকমের। প্রথমটির জন্ম হল সমৃদ্ধি ও মঙ্গলময় ভাব থেকে। দ্বিতীয় ওনাম আসে অন্তর থেকে, বাইরের সমৃদ্ধি না থাকলেও। যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট হও এবং প্রতিটি দিনকে ওনামে পরিণত কর। এই বিখ্যাত উক্তিটির এই অর্থ। এই হল দ্বিতীয় ওনাম, অন্তরের শান্তির ওনাম। মহাবলী যিনি প্রতি বছর আমাদের কাছে আসেন, তিনি এই দ্বিতীয় ওনামের প্রতিভু।
মহাবলী দেখলেন যে বামনাবতারের দুই পদক্ষেপের কাছে তাঁর ত্রিলোকের সাম্রাজ্য তুচ্ছ প্রমাণিত হল, তখন তাঁর অজ্ঞতা দূর হল এবং জ্ঞানের উদয় হল। তিনি প্রভুর কাছে নিজের মাথা পেতে দিলেন অর্থাত্ তাঁর অহংকার বিসর্জন দিলেন। নিজের সমস্ত ধন-সম্পত্তি ঠাকুরকে অর্পণ করে তিনি আধ্যাত্মিক সম্পদে নিজেকে পূর্ণ করলেন। মহাবলী মানুষের স্বীয় প্রচেষ্টা বোঝায় আর বামনাবতার ঈশ্বরের কৃপার প্রতীক। তাঁর যা কিছু ছিল সব অর্পণ করে দ্বিতীয় মহাবলী তুচ্ছ হয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি খ্যাতি ও মহিমার উচ্চ শিখরে পেঁৗছে গেলেন। ওনামের দিনে বামনাবতারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পূজা করা হয়।

“কখনও সখনও আমাদের অহংকার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অহংকারকে ঈশ্বরের শ্রীচরণে আমাদের অর্পণ করা উচিত। ৩ কাঠা জমি অামার, এই ধারণা যখন আমরা বিদায় দিই, তখন সমস্ত পৃথিবী আমাদের হয়ে যায়। ও অামার মনোভাব আমাদের দূর করতে হবে। আমাদের মনোভাব হওয়া উচিত, আমি তোমার! এ হল আত্মসমর্পণের মনোভাব। আমি তোমার হাতের যন্ত্র মাত্র, আমাদের মনোভাব এমনটি হওয়া চাই। মহাবলীর কাহিনী থেকে আমরা এই শিক্ষা লাভ করি।

“ওনামকে আমরা এক মঙ্গলময় সংকল্প হিসাবে দেখি যখন ভাল সময় শুরু হয় এবং খারাপ সময় শেষ হয়। এই উত্সব ইতিবাচক আমূল পরিবর্তনের আদর্শ সূচিত করে। মহাবলীর অসম্পূর্ণ ভক্তি যেমন পূর্ণ সমর্পণে পরিবর্তিত হল, তেমনি আমাদের মধ্যেও পরিবর্তন আসা উচিত।

“আজ ভ্রষ্টাচার এবং অধর্মের জয় জয়কার চলছে, ওনাম আমাদের ধর্ম এবং মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন মনে করায়।”

এরপর আম্মা সবাইকে উঠে দাঁড়াতে বলেন এবং সব দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে নাচ-গানে অংশগ্রহণ করতে বলেন। বোলো বোলো গোকুলবালা গোপালা জয় গোপালা এবং তন্নানা তন্নানে এই ভজন দুটির সঙ্গে আম্মা নাচ করেন। সমস্ত অডিটোরিয়াম তাঁর সঙ্গে যোগ দেয়। দ্বিতীয় ভজনটি ছিল মালয়ালম ভজন এবং আম্মা সেই নাচের সময় সামনের দিকে ঝুঁকে যেন বালগোপালকে দোল খাওয়াচ্ছেন বা কোলে তুলে নিচ্ছেন এরকম এক নতুন ভঙ্গী আরম্ভ করলেন। এই নাচের সৌন্দর্য ও মাধুর্য বর্ণনা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ভক্তি এবং প্রেমের জোয়ারে হাজার হাজার দেশী-বিদেশী ভক্ত আপ্লুত হয়ে গেলেন।
এরপর আম্মা সবাইকে দিয়ে খানিকক্ষণ ধ্যান করালেন এবং ঘন্টাখানেকের একটু বেশী সময় ধরে দর্শন দিলেন। দর্শনের শেষে তিনি ওনাম-সদ্যা(ওনামের ভুরিভোজ) এক এক করে সব ভক্তদের দিতে লাগলেন। ভক্তদের খাওয়া হলে তিনি আশ্রমের হস্তিনী লক্ষ্মীকে নিজের হাতে খাওয়ালেন। প্রায় তিনটে নাগাদ আম্মা নিজের ঘরে ফিরে গেলেন। বিকালে উরিয়াড়ী খেলা হয়। নৈশভোজনের পর এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পেশ করা হয়। আম্মার দেশী-বিদেশী ভক্তগণ এই অনুষ্ঠানগুলি পেশ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে আম্মা বন্দালো বন্দালো ভজনটি গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন।শেষে আম্মার মাতারাণী কি এবং সন্তানদের প্রত্যুত্তর জয়ধ্বনি দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।