গুরুর সান্নিধ্যে শাস্ত্র জীবন্ত হয়ে ওঠে

৩রা জুলাই, ২০১২, শিকাগো, আম্মার জাপান-আমেরিকা যাত্রা

শিকাগোতে আম্মার নতুন আশ্রম প্রাঙ্গনে আম্মার যাত্রাকালীন গুরু পূর্ণিমা উত্সব আয়োজিত হয়। দীর্ঘ দর্শনের শেষে পূঃ স্বাঃ অমৃতস্বরূপানন্দজী আম্মার পাদপূজা করেন। মহা উত্সাহে আম্মার অষ্টোত্তরশতনাম অর্চনা করা হয়।

গুরু-শিষ্য সম্পর্ক সম্বন্ধে আম্মা ভক্তদের বলেন, যে ভক্তের মধ্যে জাগরূকতা, ভক্তি এবং আত্মসমর্পণের মনোভাব রয়েছে, সে যেখানেই থাকুক না কেন, সর্বদা গুরুর উপদেশ এবং পর্থপ্রদর্শন লাভ করবে। একবার সদ্গুরুর সন্ধান লাভ করলে শাস্ত্রাদির পুনর্জন্ম হয়। বেদ এবং উপনিষদের পুনরাবৃত্তি হয়। এরকম সদ্গুরুর সন্ধান পেলে, আর আমাদের খোঁজার দরকার নেই। তাঁর সান্নিধ্যে থেকে তাঁর আত্মত্যাগের উদাহরণ নিজের জীবনে অভ্যাসের চেষ্টা করা উচিত।

বাস্তবে আধ্যাত্মিকতা সম্বন্ধে নতুন কিছু বলার নেই। সবকিছু ঈশ্বর, ঈশ্বর ব্যতীত আর কিছু নেই। এটিই একমাত্র বাণী। উপনিষদ, বেদ, ভগবদ্গীতা এবং পুরাণে এই একটিমাত্র বাণীই আছে। আমরা যখন বলি যে ১০৮টি উপনিষদ আছে, তখন আমাদের বুঝতে হবে যে সেগুলি আসলে একই বাণীর প্রচার হয়েছে ১০৮ রকমে।

আম্মার একমাত্র ইচ্ছে তার সন্তানেরা যেন সুখী হয়। সুখ সকলের অন্তরে আছে, কিন্তু আমরা তা অনুভব করতে পারি না। এর কারণ, আমাদের পছন্দ এবং অপছন্দ। আমরা অহংকারের কবলে রয়েছি এবং তাই পছন্দ-অপছন্দগুলিকে আঁকড়ে ধরে আছি। অহংকারের কবল থেকে মুক্তি পেতে গেলে আমাদের সদ্গুরুর সাহায্য চাই। আম্মার উদ্দেশ্য সন্তানদের এই শক্তি ও প্রেম প্রদান করা। আমরা যদি আমাদের পছন্দ-অপছন্দের অতীতে যেতে পারি, তবে আমরা গুরুর সদা প্রবাহিত কৃপালাভের যোগ্য হব। আমরা মনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং সমগ্র পৃথিবীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারি।

তোমাদের প্রত্যেকের কোন না কোন শপথ নেওয়া উচিত। যতটুকু নিজের প্রয়োজন ততটুকু রেখে বাকী সবকিছু অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়াই হল আধ্যাত্মিকতার বাস্তব অভ্যাস। রোজ রাত্রে আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, কি ভাল কাজ করেছি? কাউকে কি আমি আঘাত দিয়েছি? কারও উপরে কি আমি রাগ করেছি? একই ভুল যেন আগামীকাল না হয়, তার জন্য আমি কী করতে পারি? যদি আমরা ভাল কিছু করে থাকি তবে আমাদের এরকম চিন্তা করা উচিত, এর থেকেও ভাল কাল কী করে করতে পারি? কালকে কাউকে আরও মিষ্টি কথা কেমন করে বলতে পারি? কাউকে কি সাহায্য করতে পারি? দরিদ্র বা দুস্থদের জন্য অন্তত দশটা মিনিট কি আমি দিতে পারি? এমনি করে মনন করলে আমাদের সমস্ত জীবন আলোয় ভরে উঠবে। অন্তরের আলো জ্বলে উঠলে, কোন অন্ধকার আমাদের কাবু করতে পারবে না।

সমস্ত কর্ম এবং কর্তব্য প্রেমের মিষ্টতায় ভরা হওয়া উচিত। এই মিষ্টতাই সাধারণ কর্মকে গুরু-সেবায় পরিণত করে। প্রেমের মিষ্টতাবিহীন কর্ম শুধু পরিশ্রম মাত্র। কিন্তু অন্তরে প্রেমের বিকাশ ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য করা কর্ম গুরু-সেবা। এইরকম কর্ম অন্তরাত্মার পূজা। এই হল সত্যিকারের ভক্তি। অন্তরাত্মার দুয়ারের তালা খোলার চাবি এটি। এই মানব-জন্মের উদ্দেশ্য হল ঈশ্বর বা আমাদের সত্যিকারের আত্মাকে জানা।

প্রতিটি প্রাণী গুরুর শরীরের অঙ্গ। এরকম সদ্গুরুর প্রেম সহকারে সেবাই আত্মজ্ঞান লাভের পথ। এটাই উপায়, এটাই লক্ষ্য, এটাই পথ। আম্মার সকল সন্তানেরা এই প্রেমে বিকশিত হয়ে জেগে উঠুক। আমরা সবাই যেন প্রেমের প্রদীপ হয়ে বিশ্বকে আলোকিত করতে পারি। আমরা সবাই যেন কৃপালাভ করতে পারি।

আম্মার আশীর্বাণীর পর তিনি স্বহস্তে সকল ভক্তকে প্রসাদ বিতরণ করেন। সব শেষে আম্মা ভক্তদের বিস্ময়চকিত করে বন্দালো বন্দালো এবং হরি নারায়ণ ভজন গাইলেন।