২৭শে সেপ্টেম্বর, ২০১০, অমৃতপুরী

৫৭-তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে তাঁর ভাষণে আম্মা বলেন যদিও বিশ্বায়নের ফলে বস্তুজগতে যোগাযোগ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু পৃথিবী এখনও ভুগছে. ‘‘আমরা কোথায় ভুল করেছি?’’ আম্মা উপস্থিত সকলকে জিজ্ঞেস করেন. ‘‘বাইরের যোগসূত্র স্থাপন করে সারা বিশ্ব এক ছোট গ্রামে পরিণত হয়েছে. কিন্তু অন্তরের যোগসূত্র, হৃদয় ও মনের যোগসূত্রের দিকে আমরা যথেষ্ট মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছি.’’ প্রকৃতি মাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব, মদ ও মাদক দ্রব্যের সর্বনাশা পরিণতি, ধর্মপথে চলার প্রয়োজন, ধ্যানের গুরুত্ব এবং অন্য নানা বিষয় সম্বন্ধে আম্মা তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন.

তাঁর ভাষণের অন্তে প্রদূষণ এবং আবর্জনার সমস্যা সম্বন্ধে আম্মা বলেন, ‘‘ভারত আজ এক পরমাণু শক্তি. বিজ্ঞান ও আর্থিক জগতে ভারত উন্নতি করছে. অনেক রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে ২০২৫ পর্যন্ত ভারত তৃতীয় বিশ্বশক্তির পর্যায়ে পৌঁছে যাবে. কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আমরা এখনও লেংটি (‘ডায়াপার’) পরে রয়েছি.’’ আম্মা ঘোষণা করেন যে মঠ স্কুল এবং জন-সাধারণের ব্যবহারের স্থানে টয়লেট তৈরী করে দিতে রাজী আছে. রাজ্য সরকারের সমর্থন নিয়ে কেরলে মঠ এই প্রকল্প আরম্ভ করবে. তারপর সারা ভারতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা হবে.

আম্মা বলেছেন যে তিনি চান ভক্তরা যেন নিজ নিজ এলাকায় অগ্রণী হয়ে এগিয়ে আসে এবং প্রতি দু কি.মি. অন্তর অন্তর কমিটি তৈরী করে. ‘‘এরকম ধারাবাহিক কমিটি সত্যি সত্যি বিশাল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে,’’ তিনি বলেন. ‘‘কমিটিগুলি যেন নিশ্চিত করে যে নিজেদের এলাকায় স্থানে স্থানে ডাস্টবিন রাখা হয় এবং নোটিশ লাগানো হয় লোকেরা যেন যেখানে সেখানে থুতু বা আবর্জনা না ফেলে. আবর্জনা নিয়মিত সংগ্রহ করে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে.’’ আম্মা আরও বলেন যে স্কুলের বাচ্চাদের জন্য তিনি দশ লক্ষ রুমাল দিতে রাজী আছেন, যাতে তারা শুধু রুমালেই থুতু বা কফ ফেলে. এমনি করে অনেক রোগ ছড়ানোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব. সবাই প্রচণ্ড হাততালি দিয়ে আম্মার ভাষণকে স্বাগত জানায়.

(আম্মার ৫৭-তম জন্মদিনের ভাষণ থেকে উধৃত)

জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে তাঁর আশীর্বাণীতে আম্মা বলেন, ‘‘শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী হল সেই দিনটি যখন বিশ্বচৈতন্য কৃষ্ণরূপে ধরায় আবির্ভূত হন- সর্বজীবের আকর্ষণকারী কৃষ্ণ. শ্রীকৃষ্ণ সম্ভবত সর্বোত্কৃষ্ট ব্যক্তিত্ব যা মানবজাতি এ পর্যন্ত দেখেছে. তাঁর জীবন ও উপদেশ তখনকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বর্তমানেও তাই এবং চিরকাল তাই থাকবে. স্থান-কাল নির্বিশেষে তাঁর জীবন ও বাণী সকলের জন্য উদাহরণস্বরূপ, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ হলেও. হাজার হাজার বছর পরেও কৃষ্ণচরিত্রের মহিমা ও গুরুত্ব হ্রাস পায়নি. সত্যি বলতে কি, শ্রীকৃষ্ণ হলেন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় – জ্ঞানের বিশ্বভাণ্ডার. তিনি আমাদের দেখান সংসারকে পুরোপুরি স্বীকার করে নিয়ে কেমন করে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের ভূমিকা পালন করতে হয়. সেই কারণে লোকে তাঁর জীবন থেকে এত অনুপ্রেরণা লাভ করে.

মোক্ষ মৃত্যুর পরে লাভ করার জিনিস নয় – সেটা জীবনকালেই লাভ করা যায়. এই আদর্শটি শ্রীকৃষ্ণ নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে শিখিয়ে গেছেন.

অসন্তোষ সত্যিকারের দারিদ্র – সন্তোষ সত্যিকারের সম্পদ. শ্রীকৃষ্ণ মানুষকে এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছেন. তাঁর জন্মের সময় থেকে শুরু করে ইহলোকের অন্ত পর্যন্ত তাঁকে একের পর এক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে. কিন্তু এগুলি তাঁর সুখ বা সন্তোষের উপরে কখনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি. তাঁর সদা হাস্যময় মুখমণ্ডল তাঁর অন্তরের নিখুঁত সন্তোষের পরিচয়.

সাধারণ অভিনেতা তার ছোট মঞ্চের উপর অভিনয় করে. কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের কাছে সমস্ত বিশ্ব এক রঙ্গমঞ্চ ছিল. তিনি নানা ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, তাদের পোষাক-আষাক বদলেছে, কিন্তু তাঁর মনোভাবের কখনও পরিবর্তন হয়নি. ‘এসব ভূমিকার কোনটাই আমার আসল পরিচয় নয়. আমি মহাচৈতন্য.’ এমনি করে তিনি নিজের এবং সঙ্গীদের জীবনকে উত্সবে পরিণত করেছিলেন.’’

১লা আগস্ট, ২০১০

এ বছরে অমৃতপুরীতে কৃষ্ণজন্মাষ্টমী উত্সব প্রেম, আলোক এবং গানের সুরে মুখরিত হয়েছিল, যেমনটি সর্বদা হয়. ভোরবেলা থেকেই সমস্ত আশ্রম প্রাঙ্গনে ভজন শোনা যাচ্ছিল. আশ্রমের অনেক শিশুরা রাধা ও কৃষ্ণের বেশে সুসজ্জিত হয়ে ময়ূরপেখম ধারণ করে শোভাযাত্রা করেছিল.

বেলা ৪ টার সময় আম্মা কেরলের বিখ্যাত খেলা উরিয়াড়ি দেখতে রান্নাঘরের সামনের নতুন প্রাঙ্গনে হাজির হলেন. মাতৃবাণীর পুরোন পাঠকগণ জানেন উরিয়াড়ি কেরলের মাখনের হাঁড়ি ভাঙ্গার খেলা যেমন মহারাষ্ট্রে ‘গোবিন্দা’-র দিনে দহি-হাণ্ডি ভাঙ্গার খেলা হয়. দুটোর মধ্যে তফাত এই যে, কেরলে মাখনের হাঁড়ি একটা উঁচু বাঁশের সঙ্গে পুলি দিয়ে লটকানো থাকে. দড়ি ঢিলে করে হাঁড়ি বেশ নীচে নামানো হয় এবং রাখালবালকের দল এক এক করে ছুটে আসে হাঁড়ি ভাঙ্গতে. তখন পাশ থেকে অন্যরা তাদের গায়ে জল ছুঁড়ে মারে এবং পুলি দিয়ে হাঁড়ি উপরে টেনে নেয়. কেউ যদি হাঁড়ি ভাঙ্গতে পারে তবে আম্মা এবং অন্য সবাই হাততালি দিয়ে আনন্দে চিত্‌কার করেন. এ বছর উরিয়াড়ী শুরু করার আগে অমৃতার ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রীকৃষ্ণের জীবন সম্বন্ধ্যে একটি ছোট নৃত্যনাট্য পেশ করে.

খেলার শেষে আম্মা কয়েকটি ভজন করেন. সব খুদে গোপ-গোপীরা গানের সঙ্গে সঙ্গে নাচতে শুরু করে এবং অমৃতপুরী বৃন্দাবনে পরিণত হয়. পরে সান্ধ্য ভজনের সময় আম্মার প্রেমোল্লাসপূর্ণ ভজনে সবাই মুগ্ধ হয়.

রাত ১১:৩০ নাগাদ আম্মা আবার মঞ্চে আসেন. ভাগবত পাঠ এবং পূজা করা হয়. ঠিক রাত ১২টায় শংখ-ঘন্টাধ্বনিতে কৃষ্ণের আবির্ভাব সূচিত হয়. আম্মার হৃদয়স্পর্শী গানের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণকারী ছিল – রাধে গোবিন্দ গোপী গোপালা.

– তুলসী

সকালের অর্চনায় হাজার হাজার নতুন মুখ দেখা গেল অমৃতপুরীতে. আম্মা পৌঁছবার অনেক আগেই অডিটোরিয়াম লোকে ভর্তি হয়ে গেল. সকাল ৯:৩০টায় পরিপল্লীর অনাথ আশ্রমের পঞ্চবাদ্যমের দল আম্মাকে সসম্মানে মঞ্চে নিয়ে আসে. আম্মার আশীর্বাণী পূঃ স্বাঃ অমৃতস্বরূপানন্দজী ইংরাজীতে অনুবাদ করে বলেন. আম্মা উপস্থিত ভক্তবৃন্দকে উঠে দাঁড়াতে বলেন এবং নিজেদের ভুলে গিয়ে, সমস্ত দুশ্চিন্তা ভুলে গিয়ে গানের সঙ্গে নাচতে বললেন. আম্মা দুটি ভজন গাইলেন – ‘কৃষ্ণ গোবিন্দ গোপাল,’ এবং ‘ত্রিমূর্তি গলা.’ সবাই দুহাত উপরে তুলে হাত তালি দিতে দিতে গানের তালে তালে নাচতে লাগল.

এরপর আম্মা নবাগতদের দর্শন দিতে শুরু করলেন. ততক্ষণ ব্রহ্মচারীরা প্রসাদ বিতরণের বন্দোবস্ত করে ফেলল. দর্শনের শেষে প্রত্যেক ভক্তকে আম্মা নিজের হাতে মধ্যাহ্ন ভোজনের থালা প্রসাদ হিসাবে তুলে দিলেন. কয়েক ঘন্টা প্রসাদ বিতরণের পর আম্মা মঞ্চ থেকে নেমে নিজের ঘরে যাবার পথে আশ্রমের দুই হাতী – রাম ও লক্ষ্মী তাঁকে অভিনন্দন জানায় মাথা নাড়িয়ে এবং হর্ষধ্বনি করে. আম্মা তাদের সঙ্গে খেলা করলেন এবং পায়েস খাওয়ালেন. হাতীদের সঙ্গে আম্মার খেলা দেখার জন্য প্রচুর উত্সাহী ভক্ত তাঁদের ঘিরে ধরেছিল. আম্মার ইশারায় রাম ও লক্ষ্মী জলের বালতি থেকে শুঁড় দিয়ে জল তুলে উপস্থিত ভক্তদের গায়ে ছিটিয়ে দিল. যারা একদম কাছে ছিল, তারা জলে ভিজে চুৱু চুবু. রাম এবং লক্ষ্মী আম্মার এই দুষ্টুমীর কথা জানে এবং অনেকদিন ধরে আম্মা তাদের সঙ্গে এই খেলা খেলছেন. বলা বাহুল্য ভক্তরা পরম আনন্দে এই খেলায় অংশগ্রহণ করেন.

সন্ধেবেলা আম্মা ভজনের জন্যে যথারীতি অডিটোরিয়ামে আসেন. রাত ১০টায় আম্মা আবার অডিটোরিয়ামে আসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে. পরিপল্লির বাচ্চারা, অমৃতার (বিশ্ববিদ্যাপীঠমের) ছাত্র-ছাত্রীরা লোকনৃত্য পরিবেশন করে. সকলের শেষে সারা পৃথিবী থেকে আগত আয়ুধের (অমৃতা যুবা ধর্মধারা) সদস্যরা ইংরাজী ভজনের তালে তালে প্রকৃতিমাতার উদ্দেশ্যে বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান পেশ করে.

রাত্রের উত্সবের সর্বশেষে আম্মা অগ্রণী হয়ে গাইতে শুরু করলেন বিখ্যাত মালয়ালম ভজন কালী মহেশ্বরীয়ে …

২৩শে আগস্ট ২০১০, অমৃতপুরী
‘‘কোন মালয়ালী ‘ওনাম’ শব্দটি শুনলে তার হৃদয়ে যেন সহস্র বসন্ত ঋতু একসঙ্গে উদিত হয়. পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই সে থাকুক না কেন, ওনামের দিনে তার ছেলেবেলার কথা মনে পড়বে – বাড়ী, বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব,গ্রামের খেলার মাঠ – ইত্যাদির কথা স্বতস্ফূর্ত ভাবে তার মনে পড়বে. কিন্তু অতীতের মধুর স্মৃতির সঙ্গে সঙ্গে ওনামের অন্তর্নিহিত আদর্শের কথা মনে করে বর্তমান জীবনে প্রয়োগ করতে হবে. প্রেম, সুখ ও ভ্রাতৃভাব ছাড়াও ওনাম আমাদের নিঃস্বার্থ ভক্তি, দান, আত্মত্যাগ, আত্মসমর্পণ এবং এই জাতীয় গুণের বিকাশ করার কথা মনে করায়.

‘‘অনেকে মনে করে যে ভগবান বিষ্ণু ধার্মিক রাজা মহাবলীকে পাতালে ঠেলে দিয়েছিলেন. তা যদি সত্য হয়, তবে তিরু ওনামের দিনে আমরা মহাবলীর সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ণু ঠাকুরকেও কেন স্বাগত জানাই? বাস্তবে, বিষ্ণুঠাকুর মহাবলীকে নীচে ঠেলে দেননি, তিনি তাকে টেনে তুলেছিলেন আদর্শ স্তরে. শুধু তাই নয়, তিরু ওনামের দিনে সর্বব্যাপী বিষ্ণু চৈতন্য বামন অবতার হয়ে ধরায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন. এই দিনে আমরা মহাবলী এবং বিষ্ণুঠাকুরকে আমাদের বাড়ীতে এবং হৃদয়ে স্বাগত জানাই. তার মানে হল ঈশ্বরভক্তিকে এবং সমস্ত মানবজাতির প্রতি প্রেমভাবকে স্বাগত জানানো. আমাদের মধ্যে ধর্মভাব জাগরিত করতে হবে এবং ঈশ্বরের কৃপালাভের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে. জীবনে সফল হতে গেলে এগুলি অপরিহার্য. মহাবলীর কাহিনী নিজের সমস্ত জয়-পরাজয় এবং ধন-সম্পদ ঠাকুরকে অর্পণ করে শুদ্ধ চৈতন্যের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার কাহিনী.

‘‘ওনামের মত বার্ষিক উত্‌সব আমাদের এই প্রেম নতুন করে জাগাতে সাহায্য করে. ওনামের মত দিনে আমরা নিজের সৃষ্ট স্বার্থপরতার কারাগার থেকে নিজেকে মুক্ত করে বাইরের মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারি. এই স্বাধীনতার আনন্দ আমরা ওনামের দিনে অনুভব করি.

‘‘আজকের ওনাম আমাদের ছেলেবেলার ওনাম থেকে একেবারে আলাদা. প্রথামত ওনাম ফুল, প্রজাপতি ও ফড়িং বাতাসে নেচে উঠত, কলাপাতা এবং পুকলম (ফুল দিয়ে মেঝেতে বানানো ডিজাইন) আগেকার মত আজ আর ওনামের আবশ্যিক অঙ্গ নয়. ঢেঁকিতে ধান ভানা, বাচ্চাদের ফুল খঁুজে বেড়ানো, তাদের আনন্দ ধ্বনি, বাচ্চাদের মাঠে দৌড়োদৌড়ি করা এবং ওনামের দিনের বিশেষ খেলা করা – এসব আজ খুব কমই দেখতে পাওয়া যায়. মাটি, জল এবং ধরিত্রীকে আমরা প্রদূষিত করে আমাদের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়েছি.

সংস্কৃত তো আমরা আগেই ত্যাগ করেছি, আর এখন আমরা নিজের মাতৃভাষাও ত্যাগ করতে বসেছি. শুদ্ধ মালয়ালম এবং সঠিক মালয়ালম ব্যাকরণও আমরা ভুলেছি. তা ছাড়া, এমন এক নতুন প্রজন্মের সৃষ্টি হয়েছে যারা ঠিকমত মালয়ালম পড়তে লিখতে বা বলতে জানে না. তাদের মা-বাবা এ জন্য গর্বিত বোধ করে. আমাদের অরিজিনাল শিল্প ও খেলাধুলা যা মানুষের হৃদয়কে পারস্পরিক বন্ধনে আবদ্ধ করত এবং লোকেদের ঈশ্বরের স্মরণ করতে সাহায্য করত, সে সবও হারিয়ে যাচ্ছে. হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের মিলন এবং পারস্পরিক আদান-প্রদানের আনন্দ দিনের পর দিন কম হয়ে যাচ্ছে.
সংক্ষেপে, আজকের মালয়ালীর ওনাম আত্মাবিহীন ওনাম. তা সত্ত্বেও, ওনাম এবং তার স্মৃতি মনে জাগে, মরুভূমিতে বৃষ্টির মত, আমাদের মনে আশা জাগায়. সেই সঙ্গে মনে একটু বিষাদের ছায়াও পড়ে. আসলে, ওনাম আমাদের স্বাভাবিক এবং অকৃত্রিম জীবন পদ্ধতিতে ফিরে যাবার ডাক. আমাদের সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারের ডাক.

যেমন করে গাছপালা নিজের অন্তর থেকে ফুলের জন্ম দেয়, তেমনি করে আমাদেরও অন্তরের সদ্ভাব জাগাতে হবে. আমাদের হৃদয়ে অন্যদের জন্যেও স্থান দিতে হবে. আকাশ ও ধরিত্রী জুড়ে যে দৈব সত্তা ব্যাপ্ত হয়ে আছে, তার কাছে আমাদের মাথা নত করতে হবে. এমনি করে সকলে মিলে প্রতিটি দিনকে আমাদের ওনামের মত করে তুলতে হবে. আমার সন্তানদের মধ্যে এটা করার শক্তি যেন থাকে. ঈশ্বরের কৃপা সবার উপরে বর্ষিত হোক.’’