কেরলের তটবর্তীয় প্রত্যন্ত এক গ্রামে তাঁর জন্ম. আম্মা বলেন শৈশব থেকেই তাঁর চেতনা ছিল যে নাম-রূপের পরিবর্তনশীল জগতের বাইরে আলাদা এক চৈতন্যময় জগত আছে. শৈশব থেকেই সকলের প্রতি তাঁর করুণা ও প্রেম প্রকাশ পেত. আম্মা বলেন, ‘‘আম্মার মধ্য থেকে এক অবিচ্ছিন্ন প্রেমের ধারা ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর প্রতি বয়ে যায়. এটাই আম্মার সহজাত প্রকৃতি.’’
ছেলেবেলা সম্বন্ধে আম্মা বলেন, ‘‘তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করলেন, লোকেরা কেন ভোগে? তারা কেন গরীব? কেন তারা খেতে পায় না? উদাহরণস্বরূপ, আম্মা যে অঞ্চলে মানুষ হয়েছেন সেখানকার লোক জেলে. কোন কোন দিন তারা মাছ ধরতে গিয়ে কোন মাছ পায় না. সেই কারণে তারা খাবার পায় না- কখনও কখনও কয়েকদিন পর্যন্ত. আম্মা গ্রামের মানুষের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছেন. তাদের জীবনে দুঃখ-কষ্ট দেখে তিনি সংসারের প্রকৃতি ৱুঝতে পেরেছিলেন.

আম্মাকে বাড়ীর সব কাজ করতে হত, যার মধ্যে একটা ছিল গরু-ছাগলের জন্য খাবার জোগাড় করা. তা করতে গিয়ে তাঁকে প্রতিবেশী ৩০ থেকে ৪০টি বাড়ীতে যেতে হত টাপিওকার খোসা, ইত্যাদি জাতীয় ফেলার জিনিস জোগাড় করতে. তাদের বাড়ীতে গেলেই আম্মা দেখতেন তারা কষ্টে ভুগছে. বার্দ্ধক্য, দারিদ্র ও স্বাস্থ্যহীনতা থেকে ভুগছে. আম্মা তাদের সঙ্গে বসে তাদের দুঃখের কাহিনী শুনতেন, তাদের দুঃখে অংশগ্রহণ করতেন এবং তাদের জন্যে প্রার্থনা করতেন.
সময় পেলেই তিনি তাদের নিজের বাড়ীতে নিয়ে যেতেন. সেখানে তাদের গরম জল দিয়ে স্নান করিয়ে দিতেন এবং খেতে দিতেন. দরকার পড়লে তাদের দেওয়ার জন্যে কখনও কখনও তিনি বাড়ী থেকে চুরিও করতেন.

তিনি দেখলেন যে ছোটবেলায় বাচ্চারা মা-বাপের উপর নির্ভরশীল. তাই তারা বাপ-মায়ের নিরোগ দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রার্থনা করত. সেই সন্তানেরা বড় হলে বৃদ্ধ বাপ-মাকে বোঝা বলে ভাবে. তারা ভাবে, ‘‘কেন আমি ৱুড়ো বাপ-মায়ের জন্যে এসব করব?’’ তাদের খাওয়ানো পরানো এবং তাদের যত্ন করা এখন তাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছে. তাই আম্মা ভাবত, ‘‘সংসারে এত বৈষম্য কেন? সত্যিকারের প্রেম নেই কেন? এইসব দুর্ভোগের কারণ কি এবং সেগুলির সমাধান কি?’’

‘‘একদম ছেলেবেলা থেকেই আম্মা জানত একমাত্র ঈশ্বর – পরমাত্মাই সত্য এবং এই জগত বাস্তব সত্য নয়. সুতরাং, সে বহু সময় গভীর ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকত. আম্মার মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজনরা ৱুঝতে পারত না কী হচ্ছে. অজ্ঞানতা বশত তাঁরা তাকে বকা-ঝকা করত, সাধনায় বাধা দিত.’’

কিন্তু পরিবারের বিরূপ সমালোচনায় আদৌ বিচলিত না হয়ে আম্মা নিজের জগতে মগ্ন হয়ে থাকতেন. সেই সময় নাওয়া-খাওয়া ভুলে আম্মাকে দিন-রাত খোলা আকাশের নীচে থাকতে হত. তখন পশু-পক্ষীরা তাঁর দেখাশোনা করত, তাঁর জন্যে খাবার নিয়ে আসত এবং গভীর ধ্যান থেকে জাগিয়ে খাবার খেতে তাঁকে বাধ্য করত.

আম্মা বলেন, ‘‘ধ্যানের সময় এবং সারাদিন আম্মা চারিদিকের সব দুঃখ দুর্দশার কারণ খুঁজত. একসময় তার মনে হল যে নিজ কর্মফলে মানুষ ভুগছে. কিন্তু আম্মা তাতে সন্তুষ্ট হল না এবং আরও গভীরে গেল. তখন তার অন্তর থেকে উত্তর এল : ‘তারা যদি কর্মফল ভোগ করছে, তবে তাদের সাহায্য করা কি তোমার ধর্ম নয়? কেউ যদি গভীর গর্তে পড়ে গেছে, তবে, ‘নিজের কর্মফলে তারা কষ্ট পাচ্ছে,’ বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটা কি ঠিক? না, তাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করা আমাদের কর্তব্য…..

‘‘সমস্ত সৃষ্টির সঙ্গে ঐক্যবোধে আম্মা ৱুঝতে পারল তার জীবনের উদ্দেশ্য দুর্গত মানবকে সাহায্য করা. তখন থেকে আম্মার জীবন-ব্রত হয়ে দাঁড়ালো সমগ্র পৃথিবীতে সত্য, প্রেম ও করুণার বাণী বয়ে নিয়ে যাওয়া এবং সকলকে গ্রহণ করা.’’

আজ আম্মা বছরের বেশীরভাগ সময় ভারতে এবং ভারতের বাইরে যাত্রা করেন এবং দুর্গত মানবকে নিজের স্নেহালিঙ্গন দ্বারা সান্ত্বনা দেন এবং আশীর্বাদ করেন. তাঁর আশ্রমে প্রায় 3000 মানুষ আশ্রিত এবং প্রত্যহ ভারত এবং বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতে থাকে. আশ্রমবাসীরা এবং অনেক দর্শনার্থী   আম্মার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জগতের কল্যাণে নিজেদের নিযুক্ত করেছে. আম্মার বিশাল সেবা প্রকল্পের মাধ্যমে তারা গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে, দুস্থ মহিলাদের পেনশান দেয় এবং অসুস্থদের ডাক্তারী সাহায্য দেয়. সারা পৃথিবী জুড়ে অগণিত মানুষ এই প্রেমের যজ্ঞে সামিল হয়েছে.

‘‘শেষ কথা,’’ আম্মা বলেন, ‘‘প্রেমই একমাত্র ওষুধ যা দুনিয়ার ঘা সারিয়ে তুলতে পারে. এই ব্রহ্মাণ্ডে প্রেমই একমাত্র সূত্র যা সবাইকে এক বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে. এই জাগরুকতা আমাদের মধ্যে এলে সব ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে. তখন বিরাজ করবে শুধু শান্তি.