প্রশ্ন: বর্তমান সমস্যার সমাধান কী করে করা যায়?

আম্মা: বর্তমান সমস্যাগুলি খুবই চিন্তার বিষয়. সমস্যাগুলির কারণ জানা জরুরী এবং তারপর তাদের সমাধান করতে হবে. কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে পরিবর্তন একজনকে দিয়েই শুরু হয়. একজন লোক শুধরে গেলে পুরো পরিবার লাভবান হয় এবং সমাজও লাভবান হয়. সুতরাং, প্রথমে আমাদের নিজেকে শোধরাবার চেষ্টা করতে হবে. আমরা ঠিক হলে আমাদের আশেপাশের সকলের উপরেও তার প্রভাব পড়বে. তাদের মধ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে. শুধুমাত্র উপদেশ দিয়ে বা বকাবকি করে আমরা কারও মধ্যে পরিবর্তন আনতে পারি না. আমাদের নিজেদের উদাহরন স্থাপন করা উচিত. সকলের প্রতি আমাদের স্নেহ ও উদার মনোভাব থাকা উচিত. একমাত্র অটল প্রেম দ্বারাই আমরা অন্যদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারি. হতে পারে যে পরিবর্তনের লক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তাই বলে আমাদের প্রচেষ্টা ত্যাগ করা উচিত নয় এবং আশা বজায় রাখা উচিত. আমাদের প্রচেষ্টা অন্তত আমাদের মধ্যে নিশ্চিত ভাবে সুপরিবর্তন নিয়ে আসবে.

যদি আমরা কুকুরের লেজকে পাইপে ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সোজা করার চেষ্টা করি, তবে লেজ সোজা না হলেও আমাদের হাতের মাংসপেশী মজবুত হবে. কিন্তু য্খন আমরা নিজেকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা তো শোধরাবই, বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও অন্যদের মধ্যেও কিছু পরিবর্তন নিশ্চিত রূপে নিয়ে আসে. অন্তত আমাদের প্রচেষ্টার ফলে সমাজের আরও অধপতন বন্ধ করা সম্ভব. এরকম প্রচেষ্টাজ ফলে আমরা সমাজে কিছু সদ্ভাব ও সামঞ্জ্স্য নিয়ে আসতে পারি.

স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটলে লোকে এগোতে পারে না, কিন্তু স্রোতে বয়ে যাবার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে. চেষ্টা ছেড়ে দিলে ডুবে যাবে. সেরকম, চেষ্টা আমাদের বজায় রাখতে হবে.

তোমরা ভাবতে পার, “এই অন্ধকার সংসারে একা সংঘর্ষ করে কী লাভ হতে পারে?” আমাদের সকলের কাছে একটা মোমবাতি আছে – মনের মোমবাতি. তাতে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের শিখা জ্বালাও. এ কথা আদৌ ভেব না, এইটুকু আলো দিয়ে
পুরো রাস্তা কেমন করে পার হব. এক পা এক পা করে এগিয়ে যাও. দেখতে পাবে পুরো রাস্তায় প্রতি পদের জন্য যথেষ্ট আলো রয়েছে.

একজন রাস্তার ধারে একেবারে হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে. এক পথিক যেতে যেতে তার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকী হাসি দিল. সে হাসিতে লোকটি প্রভাবিত হল. কেউ অন্তত তার জন্য একটু ভাবে, এই বিশ্বাসে তার মধ্যে নতুন শক্তি এসে গেল. অনেকদিন যাবত দেখা হয়নি, এমন এক বন্ধুকে সে একটা চিঠি লিখল. চিঠি পেয়ে বন্ধু এত খুশি হল যে পাশে দাঁড়ানো এক গরীব মহিলাকে দশ টাকার একটা নোট দিল. মহিলা সেই টাকা দিয়ে লটারির টিকিট কিনল. আশ্চর্যের ব্যাপার, মহিলা লটারি জিতে গেল. লটারির টাকা নিয়ে সে য্খন বাড়ী ফিরছিল, তখন দেখে রাস্তায় এক গরীব ভিখারী অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে. মহিলা ভাবল, “ভগবান য্খন আমার উপর এত কৃপা করেছেন, তখন আমারও ওকে সাহায্য করা উচিত.” সে ভিখারীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তার চিকিত্সার বন্দোবস্ত করল. ভিখারী হাসপাতাল থেকে বাড়ী ফেরার পথে রাস্তায় অভুক্ত জীর্ণ শীর্ণ একটি বাচ্চা কুকুর দেখতে পেল, ঠাণ্ডায় কুঁকড়ে কুঁ কুঁ করে কাঁদছে. ভিখারীর মনে দয়া হল. সে কুকুরের বাচ্চাটাকে কাপড় দিয়ে জড়িয়ে আগুনের কাছে নিয়ে গেন. নিজের খাবারের ভাগ থেকে তাকে খাওয়ান. আদরে যত্নে বাচ্চা কুকুর বেশ তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে গেল এবং ভিখারীর সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গায় যাতায়াত করতে লাগল. রাত্রিবেলা ভিখারী এক বাড়ীতে আশ্রয় চাইল. সে বাড়ীর লোক তাকে বাইরের বারান্দায় জায়্গা দিল. রাত্রে কুকুরের বাচ্চার চিত্কারে বাড়ীর লোকের ঘুম ভেঙে গেল. তারা দেখল বাচ্চার ঘরের পাশেই আগুন লেগেছে. তারা কোনরকমে বাচ্চাকে বের করে আনল এবং তাড়াতাড়ি আগুন নিভিয়ে ফেলল. এমনি করে এক সত্কর্ম থেকে আর এক সত্কর্মের উত্পত্তি হল. ভিখারীকে শরণ দিয়েছিল বলে তার কুকুর পরিবারকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাল. সেই বাচ্চা বড় হয়ে সাধু হল এবং তার প্রবচন শুনে অগণিত লোক শান্তি ও আনন্দ লাভ করল.

এই কাহিনী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সমস্ত সত্কর্মের আরম্ভ একজনের মুচকি হাসি থেকে. সে কোন কিছুই করেনি, শুধু এক পথিককে দেখে একটু মুচকি হেসেছিল. একটু মিষ্টি হাসি থেকে কত লোকের জীবন আলোয় ভরে গেল.

অপরের কল্যাণের জন্য করা ছোট ছোট কাজও সমাজে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে. ফল তত্ক্ষণাত্ না দেখতে পেলেও, প্রতিটি সত্কর্ম সর্বদা সুফল দেয়. সুতরাং, আমাদের সর্বদা লক্ষ রাখা উচিত যে আমাদের প্রতিটি কর্ম অপরের মঙ্গলের জন্য হয়.
একটু মুচকি হাসিও বহুমূল্যবান এবং তার জন্য আমাদের কোন খরচ করতে হয় না. দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, আজকাল লোক বেশীরভাগ সময় অন্যদের উপহাস করার জন্য হাসে. হাসি এরকম হওয়া উচিত নয়. বরং, আমাদের নিজের ভুল এবং দুর্বলতার জন্য হাসতে পারা উচিত.

কোন মানুষ আলাদা আলাদা দ্বীপ নয়. আমরা সবাই শিকলের কড়ির মত একসূত্রে বাঁধা. আমরা জানি অথবা না জানি, আমাদের কার্য অন্যদের উপরে প্রভাব বিস্তার করে. একজনের মধ্যে পরিবর্তন এলে তা অন্যদের মধ্যেও লক্ষ করা যায়.

এ কথা বলার কোন মানে হয় না, “আগে অন্যরা বদলাক, তারপর আমি বদলাবার চেষ্টা করব.” আমরা যদি নিজেকে বদলাবার জন্য প্রস্তুত হই, তবে তার প্রভাব ও পরিবর্তন আমরা সমাজে দেখতে পাব. নিজের মধ্যে সেই বাঞ্ছিত পরিবর্তন যদি তুমি না দেখতে পাও তবে হতাশ হয়ো না, সে পরিবর্তন ভিতরে ভিতরে হচ্ছে. আর আমাদের অন্তরে হওয়া মঙ্গলময় পরিবর্তন নিশ্চিত রূপে সমাজেও মঙ্গলময় পরিবর্তন নিয়ে আসবে.